ছাত্রদের নতুন দল গঠনে শেষ মুহূর্তেও সঙ্কট কাটেনি

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া এখনো সমস্যার মধ্যে রয়েছে, বিশেষত দলের পদবী নিয়ে। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন আলোচনা ও বিতর্কের পর শনিবার এটি আবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সঙ্কট এখনও নিরসন হয়নি। এটি নিশ্চিত হয়েছে শনিবার, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক যুগ্ম আহ্বায়কের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে।

শনিবার বিকেলে, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটিতে অনেক ক্ষেত্রেই প্রোপার প্রসেস এবং ট্রান্সপারেন্সির অভাব লক্ষ করা গেছে। আমরা চাই, নতুন রাজনৈতিক দলের গঠন প্রক্রিয়ায় এসব সমস্যা যেন না হয়, তাই নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি।’

এ বিষয়ে জুনায়েদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘কমিটি গঠনে কিছু পক্ষ অভ্যুত্থানের নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব দিতে চায়, আমরা চাই তারা আসুক, তবে সিস্টেমটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। এটি একটি ডেমোক্রেটিক সিস্টেম হওয়া উচিত।’

এ মাসের শুরু থেকেই ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটি এ বিষয়ে একাধিক বৈঠকও করেছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির বেশিরভাগ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে, নতুন দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নতুন দলের নাম এবং পদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতারা জানান, আগামী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) নতুন রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে।

শীর্ষ পদ নিয়ে আলোচনা এবং কিছুটা টানাপোড়েন চলছে, তবে নাগরিক কমিটি এটিকে সঙ্কট হিসেবে দেখছে না। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা ২৬ তারিখে ঘোষণা করার বিষয়ে একমত ছিলাম এবং এখনও ঠিক আছে। তবে দলের নেতৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।’

নতুন দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য হতে পারে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০টি আসন এবং পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্য।

পদ নিয়ে জটিলতা

গত দুই মাসে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দলের গঠন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে শীর্ষ পদ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।

শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলী আহসান জুনায়েদ, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সামান্তা শারমিন এবং আরিফুল ইসলাম আদীবের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে পদবী নিয়ে এখনও আলোচনা চলমান।

নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জুনায়েদ ফেসবুকে আরো লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে, বর্তমানে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গঠন প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক এবং ইনক্লুসিভ নয়। আমরা চাই যে যোগ্য যে কেউ তার পছন্দের পদে আসতে পারে এবং যোগ্যতার পরিমাপ কী হওয়া উচিত, সেটি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহও নতুন দলটির অংশ হতে যাচ্ছেন, তবে তার পদ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

নতুন দলের নাম ও ঘোষণাপত্র

নতুন দলের নাম এবং ঘোষণাপত্র এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নাগরিক কমিটি জানিয়েছে, প্রায় তিন লাখ মতামত পাওয়া গেছে, তবে দলের নাম এখনো নিশ্চিত হয়নি। ‘বিপ্লবী পার্টি’, ‘জনতা পার্টি’, ‘ছাত্র জনতা আন্দোলন’, ‘জাস্টিস পার্টি’ এবং ‘ইনসাফ পার্টি’ নামগুলো বেশ আলোচিত হয়েছে।

নাগরিক কমিটির নেতারা জানান, দলের আত্মপ্রকাশের জন্য দুটি স্থান প্রাথমিকভাবে চিন্তা করা হয়েছে: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং মানিক মিয়া এভিনিউ। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগের দিন নেওয়া হবে।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের আয়োজন কেমন হবে, সেটির ওপর নির্ভর করছে ঘোষণা কোথা থেকে হবে। বর্তমানে শহীদ মিনার ও মানিক মিয়া এভিনিউ দুটি স্থানই আমাদের চিন্তায় আছে।’

এদিকে, নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হলেও নাগরিক কমিটি বিলুপ্ত হবে না এবং যারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাবেন না, তারা জাতীয় নাগরিক কমিটির পদে থাকতে পারেন।

7 Replies to “ছাত্রদের নতুন দল গঠনে শেষ মুহূর্তেও সঙ্কট কাটেনি”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।