শিক্ষক দিবস হিসেবে ১৮ ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করার দাবি
১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবী সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা, যিনি ছিলেন দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী, তাঁর মৃত্যুর দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। স্মারকলিপিটি গতকাল (১২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় উপদেষ্টার কার্যালয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার জমা দেন।
এর আগে, সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাজশাহী সফরকালে তাঁর কাছে একই দাবিতে স্মারকলিপি দেন রাজশাহীর কয়েকজন সমন্বয়ক।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ছিলেন। ছাত্রদের জীবন রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি বাংলাদেশে শিক্ষক নেতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেন। তাঁর আত্মত্যাগ পরবর্তী মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদও ‘জোহা স্যার’ হতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, “সর্বশেষ চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে যখন শিক্ষার্থীরা গুলির সম্মুখীন হয়েছিল, তখন শিক্ষকেরা নির্লিপ্ত ছিলেন। এ সময় শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের অনুপস্থিতি আমরা গভীরভাবে অনুভব করেছি। শহীদ আবু সাঈদও লিখেছিলেন, ‘আমি জোহা স্যার হতে চাই।’”
স্মারকলিপিতে বলা হয়, “আমরা বিশ্বাস করি, জাতি হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো শহীদ জোহা স্যারের আত্মত্যাগকে যথাযথ সম্মান দেওয়া। তাঁর আদর্শ ও ত্যাগ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য চিরন্তন প্রেরণা হয়ে থাকবে। অতএব শহীদ শামসুজ্জোহাকে যথাযোগ্য জাতীয় মর্যাদায় ভূষিত করা এবং তাঁর আত্মত্যাগকে স্মরণীয় রাখতে প্রতিবছর ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ জোহার স্মরণে বিশেষ আলোচনা সভা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান আয়োজনের দাবি জানানো হয়েছে।”
১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলিতে নিহত হন। এরপর বেয়নেটের আঘাতে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার প্রথম আলোকে বলেন, “স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান, যেকোনো আন্দোলনে শহীদ শামসুজ্জোহা আমাদের উদ্দীপনা ও সাহস হিসেবে কাজ করেছেন। চব্বিশের আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদও জোহা স্যার হতে চেয়েছিলেন। আবু সাঈদকে নিয়ে দিবস হতে পারলে জোহা স্যার কেন নয়? এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আজ (গতকাল) শিক্ষা উপদেষ্টা এবং সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। তাঁরা আমাদেরকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
শামসুজ্জোহা স্যারের মৃত্যুর পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে শামসুজ্জোহা স্যারের মৃত্যুর পর থেকে ।