গাজায় যুদ্ধবিরতি: চুক্তির ঝুঁকি ও অবস্থা
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি শুরু হয়েছে। বর্তমানে এটি প্রথম ধাপে চলছে, তবে ১০ ফেব্রুয়ারি, সোমবার, হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে এবং জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়াও স্থগিত করেছে। পাশাপাশি, গাজা নিয়ে একের পর এক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ পরিস্থিতি নিয়ে বিবিসির কূটনৈতিক প্রতিনিধি পল অ্যাডামস বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন।
জিম্মি মুক্তি বিলম্বের ঘোষণা
হামাস কেন তাদের চুক্তির পরবর্তী ধাপে জিম্মিদের মুক্তি বিলম্ব করেছে? তারা টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলকে ‘সতর্ক করার’ জন্য। হামাস আরও জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের যথেষ্ট সময় দেওয়ার জন্য তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে। হামাস দাবি করেছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার তিনজন জিম্মি মুক্তির কথা ছিল, তবে এই প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত বিলম্বিত। হামাস বলেছে, চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা সমাধানের জন্য তারা আলোচনায় প্রস্তুত।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। তাদের মতে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের নিজ বাড়িতে ফেরার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করেছে, তাঁদের ওপর গুলি চালিয়েছে, এবং গাজায় প্রয়োজনীয় মানবিক সাহায্য প্রবাহিত করার অনুমতি দেয়নি। এই বিষয়গুলো শুধু হামাস নয়, গাজার অনেক ফিলিস্তিনিরাও উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে গাজা থেকে বিতাড়িত মানুষের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অনিচ্ছা স্পষ্ট হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিমূলক মন্তব্য
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলছেন। এক সময় তার পরামর্শ ছিল, গাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে পরবর্তী সময়ে তিনি গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনির চলে যাওয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নিয়ন্ত্রণের কথাও বলেছেন। এসব মন্তব্য গাজার জনগণের মধ্যে ভয় এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিলের হুমকি
ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, শনিবারের মধ্যে যদি গাজায় বন্দী থাকা জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করবেন এবং গাজার পরিস্থিতি ‘নারকীয়’ হয়ে উঠবে। তার এই হুমকির ফলে হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করছে।
বিরক্তি এবং উদ্বেগের সৃষ্টি
হামাসের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের বিরক্তিকর হস্তক্ষেপের ফলে গাজায় বন্দী থাকা জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে গেছে। এক জিম্মির স্বজন বিবিসিকে বলেন, “এই ধরনের ঘোষণাগুলো হামাসকে আরও একরোখা করে তুলছে।”
ইসরায়েলের সন্দেহ
ইসরায়েলও হামাসের ঘোষণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। যাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাদের শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে ইসরায়েল মনে করছে, বাকি জিম্মিদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এই পরিস্থিতি যেন বিশ্ববাসী দেখুক, সেটিই হয়তো হামাস চায় না।
বিশ্ববাসীর প্রতিক্রিয়া
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি আর দীর্ঘস্থায়ী হবে না। একদিকে ট্রাম্পের উসকানিমূলক বক্তব্য এবং অপরদিকে হামাসের জিম্মি মুক্তির বিলম্ব ইস্যু, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
চুক্তির ভবিষ্যত
এখনই বলা সম্ভব নয় যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাবে কি না, তবে ইতিবাচক শুরুর পর এখন এটি সংকটের দিকে এগোচ্ছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা চলছেই, কিন্তু অনিশ্চয়তা স্পষ্ট।
উপসংহার
যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে বর্তমান পরিস্থিতি এক কথায় বলা যায়, তা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে হামাস ও ট্রাম্পের একের পর এক পদক্ষেপ এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া থেকে মনে হচ্ছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে চ্যালেঞ্জের সংখ্যা কমছে না।