মেট্রোরেল টিকিট বিক্রি থেকে আয় ২৪৪ কোটি টাকা, মে থেকে বাড়তে পারে ট্রেনের সংখ্যা

আগামী মে মাস থেকে ঢাকা মেট্রোরেল শুক্রবারেও পুরো দিন চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে যেভাবে মেট্রোরেল চলাচল করছে, তার বিরতি কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনাও চলছে, যা দৈনিক ট্রেন চলাচলের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেট্রোরেল টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ এই তথ্য সাংবাদিকদের সাথে শেয়ার করেন। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে রিপোর্টার্স ফর রেল অ্যান্ড রোড (আরআরআর) এর সদস্যদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বর্তমানে মেট্রোরেল প্রতি শুক্রবার দুপুর ৩টা থেকে শুরু হয়। অন্যদিকে, অন্যান্য দিনগুলোতে পিক আওয়ারে ৮ মিনিট পর পর এবং অফ পিক আওয়ারে ১০ মিনিট পর পর মেট্রোরেল চলাচল করছে। এই সময়সূচি অনুসারে, মেট্রোরেল খোলার দিনগুলোতে মোট ১৯৮ বার যাতায়াত করে, কিন্তু শুক্রবারে তা মাত্র ৬০ বার।

ডিএমটিসিএল-এর এমডি আবদুর রউফ বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি মে মাসের মধ্যে মেট্রোরেলের ফ্রিকোয়েন্সি এমনভাবে বৃদ্ধি করতে, যাতে তা আরও সহনীয় হয়ে ওঠে। উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা এই লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করছি।”

বর্তমানে, মেট্রোরেল গড়ে সাড়ে তিন লাখ যাত্রী পরিবহন করছে। তিনি জানান, গতকাল সোমবার মেট্রোরেলে প্রায় ৩ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়, যা একটি নতুন রেকর্ড। ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মেট্রোরেল ৩ লাখ ৮১ হাজার যাত্রী পরিবহন করেছে। কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে, দৈনিক যাত্রী সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেট্রোরেলের আয় প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২২ কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি। তবে, মেট্রোরেল পরিচালনায় খরচও উল্লেখযোগ্য। ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. আফতাবুজ্জামান জানিয়েছেন, মেট্রোরেল পরিচালনায় মাসে প্রায় ছয় কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল এবং ছয় কোটি টাকা বেতন-ভাতায় খরচ হচ্ছে। এর বাইরে আরও বিভিন্ন খরচ রয়েছে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে ডিএমটিসিএল ইতোমধ্যে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা মেট্রোরেলের আয় থেকে পরিশোধ করেছে। গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার উত্থানের সময় কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে, ডিএমটিসিএল দ্রুত সাড়ে ২ কোটি টাকা খরচ করে দুটি স্টেশন পুনরায় চালু করেছে।

এছাড়া, মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোর বিরুদ্ধে সর্তক করেছেন আবদুর রউফ। তিনি জানিয়েছেন, ঢাকার দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সিটি করপোরেশন ও পুলিশকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

মেট্রোরেল কর্মী সংকটের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। বর্তমানে ২০০ জন কর্মী প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি ছেড়েছেন, এবং আরও ৫০ জন সম্প্রতি চাকরি ছেড়েছেন। তবে, ডিএমটিসিএল-এর অনুমোদিত কর্মী সংখ্যা ১,৯১৯ হলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১,৩৭৯ জন। এই জনবল সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে এবং শিগগিরই ২০০ জন নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান ও এ বি এম আরিফুর রহমান, ডিএমটিসিএলের পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক আবদুল বাকী মিয়া, এবং এমআরটি লাইন-৫ প্রকল্পের পরিচালক আফতাব হোসেন খান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।